Sunday 6 December 2020

History of Chittaranjan Park Markets (Haat Bajaarer Itihaas) by Arindam Ghatak



সন্ধ্যা ৬ টা  বাজে | গরমের বিকেলে আলো আছে যথেষ্ট | চিত্তরঞ্জন পার্ক ১ নম্বর মার্কেটে আড্ডা দিতে হাজির,‘স্বপ্ন এখন’ | সাহানা একটু উসখুসই করছে, যাঁদের আসার কথা, তাঁরা সবাই এসে পৌছাননি|  সাহানা মাঝে মাঝেই ফোন করছে বা ধরছে | স্বপ্না আর রাজেশ্বরী মাসি সাহানা কে আশ্বাস যোগাচ্ছেন | ঋদ্ধি আর আয়ুষ একপাশে টেবিল সাজিয়ে, ইনফরমেশন কাউন্টার বানিয়ে ফেলেছে | এসে শুনলাম পিউদি, টুঈডি, আর্য এরা আগেই এসে, জায়গা সাজিয়ে ফিরে গেছে | 

একটু পরে, লোক জন আসতে শুরু করলেন | নেই নেই করেও জনা পঁচিশ এলেন | এঁরা কেও চিত্তরঞ্জন পার্কের পুরনো বাসিন্দা আবার কেও বা দোকানদার। প্রত্যেকেই হাসি মুখে এসে বসেছেন তাঁদের গল্প বলবেন, আড্ডা দেবেন, সি আর পার্কের ‘হাট বাজারের ইতিহাস’ নিয়ে | আমরা একটা পোস্টার টাঙ্গিয়েছি ‘হাট বাজারের ইতিহাস’ লিখে, তাতে বেশ কিছু সাদা কালো পুরানো বাজারের ছবি | আমাদের সাথে আড্ডা দিতে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা হাসি মুখে ছবি গুলো দেখছেন আর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন, “এটা অমুকের দোকান ছিল”, “আমি তখন খুব ছোট”, “এই ছবিটা দেখ”, ইত্যাদি | আমি, খাতা কলম নিয়ে তৈরী | একটা যুতসই জায়গা বেছে বসেছি গল্প শোনার জন্য | আমাকে অবাক করে স্বপ্না, যাকে আমি অবাঙালি বলেই জানি বিগত চার বছর ধরে, পরিষ্কার বাংলায় সাহানা কে বললেন, “বাংলাতেই বল” |

সাহানা- “ আজকের আড্ডা শুরু করি তাহলে ! কিন্তু শুরু করার আগে, আপনারা দয়া করে নিজেদের সম্পর্কে কিছু বলুন” | 

সবাই একে একে নিজেদের পরিচয় দিলেন | কবে প্রথম সি আর পার্ক এসেছিলেন, প্রথমেই কি মনে পড়ছে তাঁদের | (নাম গুলি সব শেষে দেওয়া) |


প্রথমেই বলতে শুরু করলেন নির্মল হাজরা |  "ঊনসত্তর সালে এসেছিলাম | হাওড়া থেকে কালকা মেল’এ | ভাড়া, এখনো মনে আছে আটচল্লিশ টাকা | এসে এখানে একটা মাছের দোকানে কাজ করতে শুরু করি | প্রায় ২০০ মত বাড়ি ছিল তখন এখানে | দোকানের মালিক খুব কীর্তন গাইতে ভালবাসতেন | প্রায়ই হরিদ্বার যেতেন কির্তন গাইতে | আমি দোকানেই বসতাম | পরে বাড়ি বাড়ি মাছ বিক্রি করতাম | ৩ টাকা কেজি মাছ | কাটা মাছ ৬ টাকা কেজি | (হেসে) ল্যাজা, মুড়ো কেও নিতে চাইত না, প্রায়ই ফ্রি তে দিতে হত |”

 

সাহানা – “কালী দা (কালিপদ ঘোষ) আপনাদের তো মিস্টির দোকান ছিল ‘অটল কালি সুইট শপ’ নামে, কিছু বলুন |"


কালিপদ ঘোষ– "হ্যাঁ, খুব নাম করা দোকান ছিল,  বাবা চালাতেন | মিষ্টি ও উনিই বানাতেন | অনেক দূর দূর থেকে লোকে আসতো বিয়ে বাড়ি, পূজো, পার্বনে, আমাদের দোকান থেকে মিষ্টি যেত | সি আর পার্কের প্রথম দিকের মিষ্টির দোকান | সি আর পার্কের যখন ভীত পূজো হলো, আমাদের দোকান থেকে মিষ্টি গিয়েছিল | এখন আর দোকানটা নেই | ছেলেরা সব চাকরি করে পড়াশোনা করে বাইরে |”


স্বপ্না হেসে, রহস্য করে বললেন, “যাই হোক, দেখা যাচ্ছে যে সি আর পার্কের সব চেয়ে স্টেবল (সুস্থিত) ব্যবসা তাহলে খাবার দোকান !”


সাহানা হাসতে হাসতে বলল, “আচ্ছা মার্কেট নম্বর ১ শুরু হলো কি করে ?”


শ্যাম মজুমদার বলতে শুরু করলেন, “মার্কেট নম্বর ১ এর প্রথম দোকান, মুদির দোকান | আমরা তখন বি কে দত্ত কলোনি তে থাকি, একটা মুদির দোকান শুরু করি লোদী রোড এ | সাইকেল এ করে ‘খাড়ি বাওলি’ যেতাম একবার সকালে একবার বিকেলে | দোকানে ভাই বসত | বছর চারেক পরে ভাই ই জোর করে একটা স্কুটার কেনা করলো | ৫০০০ টাকা দিয়ে!| অনেক টাকা তখন ৭০ এর দশকে ৫০০০! প্রায় বড়লোকি ব্যাপার ই বলা চলে..” একটু আনমনা হলেন যেন শ্যাম বাবু | “ঠিক করলাম সি আর পার্কে যাব, নতুন কলোনি তৈরী হচ্ছে , বাঁশ পুঁতে চাটাই খাটিয়ে শুরু হলো মুদির দোকান” |



ঝুমরু দাসগুপ্ত – “আপনাদের দোকানের পাশে একটা ভাত মাছের দোকান ছিল না !”


সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে আবার বলতে শুরু করলেন শ্যাম বাবু, “ভাই ই চালাত দোকান আমি জিনিস টিনিস নিয়ে আসতাম | এই গত মাসে ভাই শারীরিক কারণে রিটায়ার করেছে, এখন আমি বসি |”


সাহানা- "বলরাম দা, আপনার তো ২ নম্বর বাজারে সব্জির দোকান | কিছু বলুন, কেন সব্জির দোকান করলেন?”


বলরামদা – "চুয়াত্তর সালে যখন এখানে আসি, তখন দেখি, এখানে একটাই সব্জির দোকান ছিল, সবাই লাইনে দিয়ে সব্জি নিত | আমি দেখলাম, কিছু যদি নিতে  ভুলে যাও, আবার গিয়ে লাইন এর শেষে গিয়ে দাঁড়াও | ভাবলাম একটা সব্জির  দোকান করলে তো হয়, চলতে পারে | শুরু করলাম | আগে ঘন্টা-ঘর মন্ডি থেকে  সব্জি আনতাম টেম্পো তে করে | তিন চাকা ওয়ালা বড় টেম্পো হাতল ঘুরিয়ে চালু করতে হত | এখন তুঘলাকাবাদ মন্ডি থেকে আনি, ভাই আর আমি দোকান দেখি | বাচ্চারা সব চাকরি করে |”


সাহানা – "স্বপন দা আপনি বলুন, আপনার তো ক্যাটারিং এর দোকান কি ভাবে শুরু করলেন ?”


স্বপন মজুমদার – "৭১ সালে এসেছি সি আর পার্ক | একজন এর দোকানে কাজ করতাম | পরে সিঙ্গাড়া বিক্রি করতে শুরু করলাম | ১ টাকায় ৫ টা সিঙ্গাড়া | ৪০ পয়সা পার পিস্ করে মিষ্টি | টুকটাক বানাতাম, খুব একটা ভালো পারতাম না, পরে এক ভদ্রলোক কে রোজ ৫ টাকা হিসেবে দিতাম উনি খুব ভালো মিষ্টি বানাতেন | পরে একদিন মনে হলো, ক্যাটারিং এর কাজ করলে কেমন হয় | লোক জন কে বলতে শুরু করলাম, ক্যাটারিং করছি, কোনো কাজ থাকলে জানাবেন | তা এক ভদ্রলোক বললেন আমার মেয়ের বিয়ে | আমি বললাম, আমাকে দিন না| ১১ টাকা মাথা পিছু  (per head) রেট এ শুরু করি |”


অরিন্দম – "মেনুটা  মনে আছে স্বপন বাবু?”


স্বপন মজুমদার- (হেসে) "হ্যাঁ , প্রথম অর্ডার, দিব্বি মনে আছে| পোলাও, ফুলকফির সব্জি, ডাল, মাছ, মাংস, চাটনি , মিষ্টি | এখন এই গত মাসে একটা ক্যাটারিং করেছি, ১৫০০ টাকা প্লেট |”


সাহানা- "স্বপন দা আপনার দোকান একবার ভাঙ্গতে হয়েছিল না!”


স্বপন মজুম্দার– "হ্যাঁ, আমার দোকান ছিল তখন একেবারে এ ১ নম্বর বাজারের মাঝখানে | একদিন এসে দেখি দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে কারা | বাজার কমিটি কে বলতে তারা বললেন, অন্য পাশে দোকান দাও এখান তা খালি করতে হবে | সেই দিনই দোকান ভেঙ্গে এ পাশে (যেদিকে দোকানটি এখন আছে ) বানালাম | খুব কষ্ট গেছে | জল ছিল না | বাড়ি গুলো তে জলে এর কানেকশন ছিল কিন্তু দোকান গুলো তে ছিল না | এ খুব রিসেন্টলি কানেকশন পেয়েছি আমরা বাজারে কেজরীওয়াল সরকার আসার পর | ট্যাঙ্কার এর জল কিনতে হত |”


সাহানা- "আর ইলেকট্রিসিটি কবে এলো ?”


শ্যাম মজুম্দার বললেন, "আগে হ্যাজাক আলো জ্বালাতে হত  ইলেকট্রিসিটি এসেছে ৭৮ সালে |”


স্বপ্না জিগ্গেস করলেন, "আর অন্য বাজার গুলি কবে তৈরী হলো ?”


নির্মল হাজরা – "১ নম্বর আর ২ নম্বর একসাথেই | সব মাছের বাজার আগে ২ নম্বর বাজারেই ছিল, পরে ১ নম্বর এ মাছের বাজার বসলো | সাকুল্যে ৩ জন মাছ ফেরিওয়ালা  ছিল | আমি আর আরও দুজন | পরে বঙ্গীয় সমাজের গায়ে সারি দিয়ে মাছ বিক্রিওয়ালা রা বসত এটা একাত্তর এর কথা | বেশির ভাগ মাছ বিক্রেতা কাকদ্বীপ থেকে আসত |”


এমন সময়, মুকিন মশায় এসে হাজির।  এনার সি আর পার্কে প্রথম মাংসের দোকান | নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন ফিরে এসে সোজা আমাদের আড্ডায় | যদিও ইনি বাঙালি নন , এসেই পরিষ্কার বাংলায় বলতে শুরু করলেন, 

মুকিন – “আমার খুবই ইছে ছিল, ছেলেকে বাঙালি স্কুল এ  পড়াই | আমার বাবা বাংলা বলতে পারতেন না | আমি নিজের চেষ্টায় শিখেছি | আমার ছেলেরা ভালো বাংলা বলতে পারে | তা গোল মার্কেট এর কাছে ‘রায়সিনা বাংলা স্কুল’এ নিয়ে গেলাম ভর্তি করব বলে | তা ওরা বলল (হাসি) বাংলা লিখে দেখাও | ছেলে বলল  বাংলা বলতে পারি তবে লিখতে পারি না | যাই হোক, হলো না (আবার হাসি) | এখানে দুটো মাংসর দোকান ছিল ১ নম্বরে আমার আর ২ নম্বরে বাবুলালের | দুটো দোকান ই এখনো আছে, আরও  হয়েছে কয়েকটা |”


সাহানা – "এখানে আর কি কি দোকান ছিল?”


শ্রীমতি চক্রবর্তী – "একটা বাঙালি পাঞ্জাবির দোকান ছিল বনিক দের | ভদ্রলোক অসাধারণ পাঞ্জাবি বানাতেন |”

অকুস্থলে বলে রাখি দোকানটা আমাদের শুক্লা দির বাবার | শুক্লা দি, আমাদের  স্বপ্ন এখনের একজন ভারী ভালবাসার সদস্য | আড্ডায় ফিরি আবার |


সাহানা- "রবি দা তুমি বল তোমার তো ৩ নম্বর মার্কেটে  চায়ের দোকান ছিল | তোমার গল্প বল আমাদের |”


রবি দা – "এখানে প্রায় জঙ্গল ছিল তখন | নেহেরু প্লেস বলে কিছুই ছিল না, পাহাড় আর জঙ্গল ছিল খালি | আমি তখন ঝাল মুড়ি বিক্রি করি | খুব গরিব ছিলাম আমরা, হিন্দি বুঝতাম না | ঝাল মুড়ি বিক্রি করতাম জি কে ১, সি আর পার্ক, হেঁটে হেটে | হাঁটতে হাঁটতে বিক্রম হোটেল পর্যন্ত চলে যেতাম | মুড়ি, মোয়া নাড়ু, ধুপকাঠি, বেলপাতা বিক্রি করতাম | হিন্দি বুঝতাম না তো, তাই  অবাঙালি কেও  জিজ্ঞাসা করলে মাথা নাড়তাম | ‘পড়ি’ ? ‘মুরমুরা? “ সবেতেই মাথা নাড়তাম | বেশির ভাগ দিনই কেউ  না কেউ তাদের বাড়িতে খেতে দিতেন দুপুরে | এই এখন যেখানে নেহেরু প্লেস, তখন সেখানে খালি পাহাড় আর জঙ্গল! এই বড়, বড় দাড়িওয়ালা ডাকাত ঘুরত ঘোড়া চেপে | কত বার তো আমি ভয়ে পালাচ্ছি দেখে বলত, “ডারো মত, ডারো মত” চা, চিনি নিয়ে ও আসত ওরা মাঝে মাঝে| আমাকে চা করে দিতে বলত, তা দিতাম |" (সবার হাসি)


সাহানা – "রুবি (রুবি দাসগুপ্ত) তোমাদের খাবার দোকান তো খুব ফেমাস ছিল | কিছু বল |”


রুবি দাসগুপ্ত – "আমার বাবা ‘৬৯ এ আসেন | গওয়ালীয়র পটারি তে কাজ করতেন | সেটা চলে যায় | সি আর পার্কে চৌধুরী বাবুর খাবার দোকান ছিল | উন্নি বাবাকে এখানে ডাকলেন | নতুন কলোনি, কিছু না কিছু হয়েই যাবে | প্রথমে এখানে যাওয়া আসা করতেন | পরে এখানেই থাকতে শুরু করলেন | দোকান দিলেন একটা চায়ের | দোকানেই ঘুমাতেন, মাথায় ইঁট দিয়ে | বিনয় নগর (পরে সরোজিনী নগর )এর এক ভদ্রমহিলা, তাঁকে মাসি বলতাম | উনি  আমাদের এ -৬৩ তে থাকতে দিলেন | পরে চা থেকে ডাল ভাত এর দোকান | এখানে তখন সবাই বাড়ি তৈরী করছে | বাবার দোকানেই  খেত সব কনস্ট্রাকশন লেবাররা | মা রান্না করতেন, উননে | আমার বাবা ওঙ্কারনাথ দীক্ষিত ছিলেন, নিরামিষ রান্না হত | (হেসে) পড়ার লোকেরা আমাদের উননে বেগুন রেখে যেত যেদিন বেগুন পোড়া খেত | উননের আঁচে ভালো পোড়া হত | ৮৭ এ বাবা মারা গেলে মা-ই দোকান তা চালাতেন কিন্তু তারপর সে দোকানটা ভেঙ্গে দেওয়া হলো | আমরা দোকানেই থাকতাম, আমাদের মাথার ছাদ চলে গেল | তখন রাতিশ ভট্টাচার্য মশায়, আমরা জেঠু বলতাম, তিনি আমাদের থাকতে দিলেন তাঁর বাড়িতে | বিনা পয়সায় | খুবই স্নেহ করতেন আমাদের | মা পরে ৩ নম্বর মার্কেট এ খাবার দোকান দিলেন | খুব একটা চলত না সেই দোকান টা | আমাদের দোকানটা একটা ল্যান্ডমার্ক এর মত ছিল | ধরুন কারো প্লাম্বার বা কোনো মিস্ত্রী দরকার আমাদের দোকানে হাজির হতেন | কাউকে না কাউকে পাওয়াই যেত |”


শমিক রায় – (রহস্য করে) “তাহলে তোমাদের দোকানটা তখনকার দিনের ‘urban clap’ ছিল কি বল ?” (সবার হাসি) | 


সাহানা – "শ্রীমতি (শ্রীমতি সেনগুপ্ত)  দি তোমার মতে মার্কেটর ভূমিকা কি?সি আর পার্কের ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন)এ ?”


শ্রীমতি চক্রবর্তী - (হেসে) সি আর পার্কের আগে বাঙালি জিনিস কিছু পাওয়া যেত গোল মার্কেট বাজারে | আমার মনে আছে একদিন বিকেলে আমার মা খুব খুশি হয়ে বললেন, “জানিস, মার্কেটে একটা মাছের দোকান হয়েছে!”


মালবিকা দি  - "আমরা সবাই পৌষ মেলার অপেক্ষা করতাম তখন, ভালো ভালো জিনিস আসত | সেসবের তো বাজার ছিল না এখানে | একটা ভালো কাপড়ের দোকান ছিল না | এখনো খুব বেশি নেই | তবে সি আর পার্কের বাজারের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে বাঙালির দরকারের সব জিনিস, দশকর্মা, মাছের বাজার ইত্যাদি | আগে এখানে ট্রাভেল এজেন্সী ও খুব একটা ছিল না | আস্তে আস্তে তৈরী হলো সব | কলকাতা থেকে আত্মীয় স্বজন এলে তারা দিল্লি ঘুরে দেখতে চাইত, এদিকে তখন সাকুল্যে একটা কি দুটো বাস আসত | টেবিল পেতে ছোট ছোট ট্রাভেল এজেন্সী খুলল | বই এর দোকান ভালো ছিল না এখন ও নেই সি আর পার্কে | এক ভদ্রলোক, ঋষি চক্রবর্তী বলে উনি শুরু করলেন, একেবারে যাকে বলে “with a missionary zeal” | ভালো বই এর স্টক রাখতেন ভদ্রলোক, একদিন এসে আমার বাবাকে বললেন, “কেও বই কিনছে না, দোকান বন্ধ করে দেব |” তা বাবা ওনাকে বোঝালেন, “ দ্যাখো রিটায়ার্ড  লোকের কলোনী,  তুমি এক কাজ কর একটা খাতা কর | লোকে বই কিনবে আর মাসে মাসে তোমাকে পয়সা দিয়ে শোধ করবে |“ কথা টা ভদ্রলোকের মনে ধরল | কিন্তু আবার মাস ছেয়ক পর সেই এক ই কথা | “কেও বই কিনছে না, দোকান বন্ধ করে দেব |” বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, “খাতা চালু করোনি ?” উত্তরে উনি বললেন, “ করেছি, মাত্র তিন টি খাতা চলছে | একটা আপনার আর বাকি দুটো আপনার দুই ভাই এর” (সবার হাসি )


কথায়, আড্ডায় কখন সাড়ে আটটা বেজে গেছে কেও খেয়াল করেনি | প্রায় দু ঘন্টা চলেছে আমাদের আড্ডা | এর মধ্যে অনেকে যাঁরা বাজার করতে এসেছিলেন  তারাও আমাদের সাথে জুড়ে সমানে আড্ডা দিয়েছেন | তাঁদের গল্প বলেছেন | বক্তা, শ্রোতা সব মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ জনেরও বেশি | সবার কিছু না কিছু গল্প আছে | কিছু গল্প মজার, কিছু বা বিষাদের | যেমন ৮৭ সালের কালী পূজোর রাতে শিখ উগ্রবাদীদের হামলার গল্প | আবার কিছু গল্প যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় কঠিনতম পরিস্থিতির, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষজনের দৈনন্দিন যুদ্ধের গল্প| অতি সাধারণ মানুষের অসাধারণ কীর্তিকলাপের গল্প | দাঁতে দাঁত চেপে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার গল্প | জিতে যাবার গল্প | কারণ শুভ সমাপ্তি না হলে যে গল্প শেষ হয় না |



আড্ডার সদস্যরা

১) ড: স্বপ্না লিড্ডল

২) প্র: নারায়ণী গুপ্তা

৩) ড: কল্যাণ সেন

৪) শমিক রায়

৫) শাহানা চক্রবর্তী

৬) শ্যাম মজুমদার

৭) তাপসী বনিক

৮) স্বপন মজুমদার

৯) ঝুমরু মল্লিক

১০) প্রদীপ সেন

১১) কালীপদ ঘোষ

১২) বলরাম পাল

১৩) নির্মাল্য হাজরা

১৪) মুকীন জি

১৫) রুবি দাসগুপ্ত

১৬) রবি দা

১৭) সুভাষ চৌধুরি

১৮) শ্রীমতি চক্রবর্তী

১৯) সঞ্জয় দাসগুপ্ত

২০) প্রবীর সেন

২১) শান্তি মজুম্দার

২২) শরমিলা সিন্হা

২৩) মালবিকা মজুমদার

২৩) অদ্রিজা রায় চৌধুরী

২৪) করবী আচার্জী








No comments:

Post a Comment